পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ, চারণ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৩৭ মিনিটে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের মতে, তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিলেন, কিন্তু রাতে অসুস্থতা অনুভব করলে তাঁকে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গামাটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে তাঁর মরদেহ রাঙ্গামাটি জেল রোডস্থ বাসভবন ও দৈনিক গিরিদর্পণ কার্যালয়ের সামনে রাখা হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক শুভানুধ্যায়ী ও সহকর্মী তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদ দীর্ঘদিন দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাঙ্গামাটিতে দৈনিক গিরিদর্পণ প্রকাশ করে পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তার সাংবাদতিকতা শুরু। পার্বত্য অঞ্চলে কর্মজীবনে তিনি বিশ্বগণমাধ্যম বিবিসি , রয়টার্স, এপি সহ বাংলাদেশ বেতারে কাজ করেন। রাঙ্গামাটি থেকে তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক গিরিদর্পন ও সাপ্তাহিক বনভূমি তিন যুগের বেশি সময় ধরে পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা সদর সহ প্রত্যন্ত পাহাড়ী উপজেলা অঞ্চলে অসংখ্য সংবাদকর্মী ও সাহিত্যিক ও কবি সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমি পাহাড়ের সাংবাদিকতার আতুরঘর বলেও স্বীকৃত ।
শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সামনে তাঁর মরদেহ রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে সকাল ১০টায় রিজার্ভ বাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুর শুক্কুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। জানাজায় অংশ নেন আজ শুক্রবার সকাল দশটায় শহিদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়ামে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, রাঙ্গামাটি জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মো. হাবীব আযম, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ভুট্টো , প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, মরহুমের ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরসহ রাঙ্গামাটির কর্মরত সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ জানায়ায় শরিক হন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয় ।
এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি মীরসরাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির শোকবার্তা
চারণ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদের মৃত্যুতে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতায় তাঁর অবদান অপূরণীয়। কর্মজীবনে তিনি যে নিষ্ঠার সাথে পেশাগত কাজ করেছেন, তার জন্য তিনি আখিরাতে পুরস্কৃত হবেন—এ কামনা করি।
Leave a Reply