একদিকে প্রশাসনের নির্দেশ, অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু রাঙামাটির রাজস্থলী ও বাঘাইছড়িতে এসব যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে চলছে উল্টো চিত্র—আইন অমান্য করে দিব্যি জ্বলছে অবৈধ ইটভাটা। যেন পাহাড়ের বুকে গড়ে উঠেছে দুর্নীতির দুর্গ, যেখানে ‘অদৃশ্য শক্তি’র ছায়ায় দাউদাউ আগুনে পুড়ছে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য আর প্রশাসনের নৈতিকতা।
রাজস্থলীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সচল দুই ভাটা!
উপজেলার ২ নম্বর গাইন্দ্যা ইউনিয়নের কলেজ পাড়া গ্রামের “কে ভি ডব্লিউ ব্রিকস” এবং বড়ইতলি গ্রামের “বি আর বি ব্রিকস ফিল্ড”—এই দুই ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে সরকারি ছাড়পত্র ছাড়া, প্রশাসনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও। অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এবং প্রশাসনের নীরবতায় দিনের আলোয় নির্ভয়ে চলছে এই অপকর্ম।
বাঘাইছড়িতে অভিযান-জরিমানা-নোটিশের পরও আগুন নিভেনি ইটভাটার আগুন!
বাঘাইছড়ির এমএমসি ব্রিকস, কেবিএম ব্রিকস এবং ফাইভ স্টার ব্রিকস—তিনবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা, বন্ধ ঘোষণা, এমনকি নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৬ জানুয়ারি: আড়াই লাখ টাকা জরিমানা।
১৮ ফেব্রুয়ারি: দেড় লাখ টাকা জরিমানা।
১৫ মার্চ: স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা।
তারপরও কয়েকদিনের ব্যবধানে আবার চালু এসব ভাটা। প্রশাসনের অভিযান যেন লোক দেখানো নাটক। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা—“প্রশাসনের চেয়েও শক্তিশালী কারা?”
অপরাধী কারা?
তথ্য অনুযায়ী, এসব ভাটার মালিকরা কেউ ব্যবসায়ী, কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউবা নেতার আত্মীয়। ফলে প্রশাসনের পদক্ষেপ থেমে যায় এসব অদৃশ্য শক্তির কাছে।
রাজস্থলী ও বাঘাইছড়ির সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে:
সরকার যেখানে পরিবেশ রক্ষায় কঠোর হচ্ছে, সেখানে কিছু লোভী ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে পাহাড় ধ্বংস করছে। আমরা বিচার চাই!”
এই অবৈধ ভাটাগুলো পাহাড়ি পরিবেশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে: নির্বিচারে কাঠ পোড়ানোয় বন উজাড়
শিশুসহ স্থানীয়দের শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়া, জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক হুমকি।
কতৃপক্ষ কি নির্লিপ্ত, নাকি অসহায়?
রাজস্থলীর ও বাঘাইছড়ির” প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইটভাটা গুলো বারংবার স্থায়ীবন্ধ সহ জরিমানা করা হয়। প্রশ্ন হলো—এতবার বন্ধ করেও যখন চালু হয়, তখন শুধুই ‘ কাগজে কলমে বন্ধই ’ কি যথেষ্ট?
আইন কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য?
“অদৃশ্য শক্তির” কাছে প্রশাসন কি হেরে যাচ্ছে?
নাকি এই দুর্নীতির নীরব অংশীদার?
জনগণের চাওয়া: অবৈধ ভাটা চিরতরে বন্ধ, ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, প্রশাসনের ভেতরের যোগসাজশ তদন্ত, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
পাহাড় কি তবে পুড়তেই থাকবে? নাকি এখনই রুখে দাঁড়াবে প্রশাসন?
নীরবতা নয়, চাই জবাবদিহিতা।
Leave a Reply